রাতেই কলম ধরতে বাধ্য হলাম। না ধরে যে পারছিনা। থুড়ি, কলম না, মোবাইল এ গল্পঃ লেখার পাতা খুলতে।
রাত ৩টে এখন। সকাল থেকে বেশ কিছু ভুত চতুর্দশী' র শুভকামনা এসেছে। তাই দেখতে দেখতে আর একজনের সঙ্গে গল্পঃ করতে করতে কথা উঠলো, পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে ভুত চতুর্দশী, মহিলা অধিকার মঞ্চ থেকে কোনো বিরোধ করা হয় না শুধু ভুত কেন, পেত্নী চতুর্দশী কেনো না।
কিছু যুক্তি ও এলো। পেত্নী তো সংবাদ মাধ্যম এ মাহাত্ম রাখবেনা তাই কেউ চিন্তিত না। (মানে তাদের news value নেই)। আর একটা এলো পেত্নী রা বিরোধিতা করছে কি না সেটা তো আমরা জানিনা। হয়তো করতেও পারে।
যাক, আড্ডা সেরে নিজের সামাজিক মাধ্যমে লিখে দিলাম,
"আজ সকাল থেকে কিছু শুভকামনা ভূত চতুর্দশী উপলক্ষে পেলাম। নারী বাদীরা কেনো বিরোধিতা করে দাবী নিয়ে রাস্তায় নামছে না ?
শুধু ভূত কেনো? পেত্নী চতুর্দশী কেনো না??"
এক বন্ধু জবাব দিলেন।
"এইমাত্র খবর পাওয়া গেছে যে আজ দুপুরে ভূতেদের সঙ্গে ওদের খুব ঝগড়া হয়েছে। ওরা পূর্ণ নারী স্বাধীনতা চেয়েছিল যা ভূতেরা মানতে রাজি নয়। তাই পেত্নিরা চর্তূদশী পালন করছে না। সব টিভি চ্যানেলই খবরটা ফ্ল্যাস করছে । ভাই, টিভিটা একবার খুলে তো দেখো।"।
সে সব লিখে পড়ে যথা রীতি ঘুমে আচ্ছন্ন হলাম । রাত ২নাগাদ প্রায় রোজ উঠি, আজ ও উঠেছিলাম কলঘরে যাবার জন্য। ফেরৎ যখন বিছানায় বসলাম, মনে হলো খাটের নিচে কেউ রয়েছে। চমকে আলো জ্বালানো সেরে খেয়াল হলো খাট তো বহু বছর নেই। এখন তো বাক্স কেই শোবার জায়গা বানানো হয়ে। মানে ওপর তলা টা বিছানা, আর নিচে বাক্স, তাই তার নিচে তো আরশোলা ইঁদুর ছাড়া কিছু হবে না।
পা দুলিয়ে একটু নিশ্চিত হবো, তার আগেই শুনি ছাতে করা দাপা দাপি করছে। আবার ভীষণ চমকে গেলাম। আসে পাশের ফ্ল্যাট থেকে কিছু দামাল ছেলে রা পাঁচিল ডিঙিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু সে তো বিশেষ দিনে, আর শুধু দিনে। এতো রাতে, তাও আবার অন্ধকারে, নাহ্, সম্ভব না। তাহলে কি বাঁদর? না, তাও না।
কিছু আওয়াজ, কিছু শব্দ, কিছু কথা, থুড়ি, কথা কাটা কাটি ভেসে এলো। মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করলাম।
"এই তোরা কি করতে এসেছিস এখানে, এই মানুষ টা তোদের নিয়ে লিখে দিলো তো একদম হাতে গোবরে গোলাপ নিয়ে ভ্যালেন্টাইন করতে চলে এলি। চল, ভুত চতুর্দশী শেষ হতে এলো, শিগগির চল। পাঁঠা তুলে এনে ঘাড় মটকে রেখেছি। পরিষ্কার করে কেটে আমাদের ভোজন করা, তবে তো তোদের উপোস ভাঙবি।"
"না, আমরা বানাবো না। আজ আমরা রন্ধন বন্ধ বিরোধ করছি। বাজারের বিরিয়ানি খে এলাম এখুনি। এই মানুষ টা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। একে গোলাপ গুলো দেবো। ও আমাদের সবার ভ্যালেন্টাইন। তোরা যা, আর এবার আজ পেত্নী চতুর্দশী হবে। যেমন টি আমরা তোদের জন্য রান্না করেছি, এবার তোরা করবি। ঘাটের দেহ বিহীন মড়া সব, বলিহারি যাই। মরে কবে ভুত হয়েছিস, এখনও আমাদের ওপর রাজত্ব করবি। এবার করে দেখা।"
এবার অনেকের কণ্ঠে বিশাল স্লোগান ভেসে উঠলো,
"দুনিয়ার পেত্নী এক হও, ভুত বংশ নিপাত যাও।
আমাদের দাবি মানতে হবে, তোদের উপোস করতে হবে।"
কিছু চিৎকার, "আমরা এই মুহূর্তে এই লোকটার ঘাড় মটকে ভুত বানিয়ে দিচ্ছি। বিটকেল লোক, আমাদের শান্তি ভঙ্গ করছে।"
পাল্টা চিৎকার, "সাহস থাকে তো এর কাছে গিয়ে দেখা, আজ আমরা সবাই পেত্নী বন্ধন করে একে তোদের থেকে রক্ষা করবো। শুধু আজ না, আমরা দলে দলে ভাগ হয়ে একে সারাক্ষণ তোদের থেকে রক্ষা করবো।"
শুনতে শুনতে আমার তো অবস্থা খারাপ। রাম, কৃষ্ণ, দুর্গা, কালী, সবাই কে ভুলে ভাবছি, এ যাত্রা বাঁচবো তো? পেত্নী রা কি বাঁচাতে পারবে? আবার ভাবছি, জীবনে ভ্যালেন্টাইন কি জানলাম না, এবার পেত্নী দের ভ্যালেন্টাইন কালী পুজোর দিনে, তাও নেই মামা থেকে কানা মামা ভালো।
ওদের তর্ক ক্রমশই কর্কশ থেকে কর্ণকষ্টকর হয়ে উঠেছে। দর দর করে ঘামছি। মনে হলো ভুত পেত্নী দের দল আমার ঘরে ঢুকে এসেছে, যেনো সত্তর দশকের বাংলার দুই বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোকেরা দুম দাম বোমা ছুঁড়ছে আর স্লোগান দিচ্ছে।
একটি ভুত আমার ঘাড়ে হাত দিয়েছে, পেত্নী তার হাত টা কেটে দুখান করে দিল। ভুতের হাত টা ঘাড়ে তাও বসে যাচ্ছে, চিৎকার করতে গিয়ে আওয়াজ বেরুলো না।
সেই মুহূর্তে ঘুম ভেঙে গেলো। বাইরে কুকুর এর দল পরিত্রাহে চিৎকার করছে, কখন বেঠিক করে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল করিনি। মাথা টা পাস বালিশ পেরিয়ে বেঁকে ছিল তাই ঘাড় ব্যাথা করছে।
উঠে জল খেলাম। শুধু ভাবলাম, রাস্তার কুকুর গুলো কি করে জানলো ভুত পেত্নী এসেছিল।
নাহ, ওদের ব্যাপারে আর লিখবো না। তিন বার কান মল্লাম।
অনুপ মুখার্জি "সাগর"
Great!
ReplyDeleteবাহ, খুব ভালো হয়েছে। এবার পেত্নী রা তোমাকে নিয়ে চুলোচুলি শুরু করে দেবে।
ReplyDeleteবাঃ দারুন
ReplyDelete