সোনার পাথর বাটি
আমরা কি ধান গাছের তক্তা দিয়ে বানানো তক্তপোষে আকন্দ গাছের ছায়ায় বসে সোনার পাথর বাটি তে কাঁঠালের আম সত্ত খেতে খুব ভালো বাসি আর কিছু মানুষ সেটাই খাইয়ে খাইয়ে আমাদের বোঝাতে থাকে যে আমাদের পেট ভরা আছে।
'কাকীমা, ও কাকীমা, দরজা খোলো, দেখো কে এসেছে ।
'হ্যাঁ রে, কে এত ডাকাডাকি করছিস রে।'
মানিক পুরের একটি গ্রাম এ সন্তু কাকীমা পুরো গ্রামের কাকীমা। বয়েস 60 পেরিয়েছে সবে কিন্তু সময়ের ঘাত প্রতিঘাত বেশ কিছু বছর জুড়ে দেয়, ওনার ও তাই।
'ও মাসিমা, আমি বিজয়, ওই হালদার বাড়ির ছেলে, তুমি চেনো তো।'
'ও হ্যাঁ রে, তোকে চিনবো না কেন রে ড্যাকরা , এই তো সেইদিন জন্মালি। তো এখন সব গোঁফ দাড়ি বাড়িয়ে বড় হয়েছিস। আর সাথে তো নৃপেন, সেলিম আর কেষ্টা, তাই না ?'
'বাঃ কাকীমা, তুমি তো সবাই কে চেনো জানো , আর জানবেই না কেন। আমরা তো কাকুর কাছেই হাতে খড়ি করেছি, আর কাকুর কাছেই আমাদের জীবনের সব শেখা। '
'সেসব তো এখন পুরোনো হয়ে গেছে রে। তোদের কাকা তো তোদের বাবা কাকা জেঠা দের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করেছিল, আর তখন গ্রামের সব দাদু ঠাকুমার অধিকার ছিল কারুকে ডেকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে ভুল ধরিয়ে দেয়া। এখন তো সেটা দুঃসাহস হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই যে তোরা, আমি যদি তোদের বলি ইটা করিস না ওটা করিস না, তোরা কি আর শুনবি। '
এবার বিজয় কে টপকে সেলিম বলে উঠলো, 'কেন শুনবো না কাকিমা, আর সেই জন্যই তো আসা তোমার কাছে। কাকুর অভাব তা না সব সময় রয়ে যাচ্ছে। আর উনি তোমার্ সাথে সব কিছু নিয়ে কথা
বলতেন তাই আমরা অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম, তুমি এক আছো, আর তোমার উপদেশ আমাদের অনেক দরকার।'
'তা বাবা জীবন রা, কি বলতে চাইছো একটু খুলে বলো না। বয়েস হয়েছে তো, তাই সব কিছু সহজে বুঝতে পারিনা। '
'কাকিমা, এই বলছি যে তুমি তো একলা আছো, বাড়ির একটা দেখাশোনা ও ব্যাপার আছে। ' এবার কেষ্টা ব্যাট ধরলো, 'তাই আমরা বলছি, তুমি না বাড়ি টা ভাড়ায় দিয়ে দাও আমাদের ক্লাব কে । আমাদের তো টাকা কড়ি নেই, তবে আমরা সব সময় তোমার পাশে থাকবো, দরকার এ সময় - অসময় পাশে দাড়াঁবো। সাথে তোমার বাড়ির দেখাশোনা টাও আমরা করে দেব। মাসে ২,০০০ টাকা ভাড়া দেব, তোমার ও হাত খরচ চলে যাবে, কোনো অসুবিধা হবে না কাকিমা। '
এবার অন্য জন ধরলো। 'কাকিমা, তোমার বাড়ির দেয়াল থেকে চুন পরে যাচ্ছে, খামোকা বর্ষায় ঘরে জল ঢুকবে। আমরা বাড়ির চারিদিকের দেয়াল মেরামত করে দেব নিজেরা, আর পুরো বাড়ি মেরামত করে দেব। তুমি আমাদের সঙ্গেই থাকবে, আমরা তো সব তোমার সন্তান, তাই না কাকিমা। '
'তা বেশ বলেছিস সবাই, তোরা তো আমার সন্তান এর মতন। তা আমার বাড়ি টা তোরা পুরোটা দখল নিবি, আর আমাকে দিবি শুধু মাসে মাসে ২,০০০। কথা তা কি ঠিক হলো রে। '
'কাকিমা, আমরা তোমার বাড়ি তা পুরো মেরামত করে দেব, তাতে তো আমাদের তো বেশ টাকা খরচ হবে সেটা তো আমরা তোমার কাছ থেকে নিতে পারবোনা। তোমার বাড়ি তোমারই থাকবে। আমরা এই দুবছর ব্যবহার করবো আর তারপর তোমার বাড়ি তোমার। তখন না হয়ে আরেকবার মেরামত করে দেব যা দরকার হয়ে। '
'তা বাবা, তোমাদের মতন এরম সোনার টুকরো ছেলে আর কোথায় পাবো। আমার বাড়ি মেরামত করবি এক বার এখন, একবার আবার দু বছর পর। মাসে মাসে ভাড়া দিবি। আচ্ছা, তোরা তো জানিস যে আমার ছেলে তো হায়দ্রাবাদ এ আছে, তা সে যদি গ্রামে এসে থাকে তখন তো বাড়ি তা লাগবে। '
'তাতে কোনো অসুবিধা নেই, তোমার ছেলের যখন আসার হবে, যদি ও সব সময়ের জন্য এসে যায় তাহলে আমার বাড়ি ছেড়ে দেব, শুধু আমাদের ১০-১৫ দিন আগে একটু বলে দিও। '
'বেড়ে বলেছিস রে তোরা সবাই, কিন্তু জানিস, তোরা না আমাকে সোনার পাথর বাটি তে খাবার খেতে দিচ্ছিস কিন্তু আমি তো রে পেতলের থালা গেলাস ব্যবহার করি তাই তোদের দেয়া এই সোনার পাথর বাটি তে খাবার খেতে পারলাম না। আমি মরে হেজে যাই, তারপর আমার ছেলে যখন আসবে তখন যা হয়ে করিস ওর সাথে। কিন্তু এখন আমাকে রেহাই দে সোনা বাছারা। আমি তো ভাই এই বাড়ি টা তোদের দিয়েই এই গ্রামে ভিটে হারা হয়ে থাকতে পারি না। '
' আচ্ছা তোরা এবার আয়, আমি ভাতে ভাত ফুটিয়ে রেখেছি। পুকুরে ডুব তা দিয়ে খেয়ে নিয়ে বিশ্রাম করবো। '
Excellent narration by the author feeling jealous from where u get these thoughts so truthful and practical but impractical for few folks
ReplyDeleteExcellent description of what is happening in many villages in many states in India. The political goons are grabbing the houses of vulnerable persons in this manner. Hope the leadership reads it and recognize that their misdeeds are well recognized by the people.
ReplyDelete