Skip to main content

অন্ধ যুগ - ধর্মভীর ভারতীর লেখা এক অদ্বিতীয় নাটক -

 অন্ধ যুগ - ধর্মভীর ভারতীর লেখা এক অদ্বিতীয় নাটক -


মহাভারত নিয়েই অনেকেই অনেক কিছু লিখেছেন এবং লিখবেন, তার অনেক লেখা হয়তো ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে গেছে, কিন্তু ১৯৫৩ সালে লেখা কবিতা নাট্য রূপ যা মহাভারতের অষ্টাদশ দিনের পটচিত্র কে কল্পনা করে লেখা, সে অদ্বিতীয় নাটক চিরকালের সেরাদের ভেতর একখানি, কারণ ইটা শুধু স্বাধীনতাউত্তর হিংসার পটচিত্র কে সাথে নিয়েছে, এ বোধহয় পৃথিবী ব্যাপী চিরাচরিত চালু থাকা নৈরাজ্য আর হিংসা কে নিয়েই লেখা কাহিনী।

২৭সে মার্চ ২০২৩, বিশ্ব থিয়েটার দিবস উপলক্ষে রাম গোপাল বাজাজ এই নাটক টার মঞ্চন করেছিলেন। যেখানে দর্শক রা নাটকএর বর্তমান সময় এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই আলোচনা করতে উদ্বিগ্ন, তখন রাম গোপাল বাজাজ বললেন যে নাটক টির প্রাণসঙ্গিকতা উন্মুক্ত, আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করা যায়।   

প্রধান চরিত্র দের না নিয়েই, দ্বিতীয় পংক্তির চরিত্র যেমন অস্বথমা, গান্ধারী, জুজুৎসু ইত্যাদির দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে সম্পূর্ণ নৈরাজ্য থেকে সুরাজ্যের দিকের যাত্রা, যুদ্ধের দ্বায়িত্ব, নীতি এবং নৈতিকতা আর মানবিকতার ভিত্তি গুলো কে ভবিষৎতের জন্য দুর্বল করে দেয়া, এই সব নিয়ে প্রশ্ন, সেই সব এই গল্পের নাটকীয়তা। 

মহাভারত, খুব ছোট্ট কথায়, দুর্জনের ওপর সুজনের জয়, আর কথায় আছে যে যা কিছু মহাভারতে আছে, তার সব কিছু দুনিয়া  তে আ  ছে, খারাপ, ভালো সব।  মহাভারতে শান্তি ও প্রীতির কথাও যথেষ্ট আছে। দ্বন্দ্ব আর সংঘাত, তার নিষ্ঠূর কারণ আর ফলাফল, যে ভাব চারিদিকে পৃথিবী কে আক্রান্ত করেছে, সেটা খুব সুন্দর ভাবে মঞ্চস্থ হয়েছে।  একটা দৃশ্যে, যেখানে সঞ্জয় যুদ্ধের হিংসা আর ভয়াবহতার বর্ণনা দিচ্ছে, যা শুনে এক দিকে মঞ্চে গান্ধারী দুঃখে ফেটে পড়ছে, অন্য দিকে দর্শক ও যেন গান্ধারী দুখঃ তে বহে যায়।  

আসলে, স্বাধীনতার পরেই লেখা এই নাটকটি মহাভারতের চরিত্র আর ঘটনা গুলির ভেতর তৎকালীন ঘটনা গুলির প্রতিবিম্ব। দেশ ভাগের ট্র্যাজেডি ঠিক কুরুক্ষেত্রের সর্বনাশ এর মতন, যেন জয়ের আগে সব কিছু ধ্বংস হওয়া, দেশ ভাগ এ মানুষ কে যা কিছু হারাতে হলো, তা তো কোনো দিন ফেরানো গেলো না, যাবেও না, কিন্তু ওদের স্বার্থ কি ? গান্ধারীর শ্রী কৃষ্ণ কে অভিশাপ দেয়া, অশ্বত্থামার অন্যায় অস্ত্র প্রথা ব্যবহার, জুজুৎসুর নিজের আপন ভাই আর ন্যায্য পথের ভেতর বিভক্ত হওয়া, সব ই যেন সেই সময়ের দেশ ভাগ আর স্বাধীনতার কাহিনী তে আবর্তিত হয়েছে। 

নাটক টি প্রথম মঞ্চস্থ হয়ে ১৯৬৩ তে, ইব্রাহিম  আলকাজির নির্দেশনায়, এ ছাড়া গিরিশ কার্নাড, এম কে রায়না, এনারাও অনেক শো করেছেন। 

অন্ধ যুগ , নামকরণ তা শুধু ধৃতরাষ্ট্রের অন্ধত্ব নিয়ে না, যুগের দৃষ্টি বিহীনতা যে চিরাচরিত, যেখানে নেতা থেকে প্রজা, সাংবাদিক থেকে আমলা, সবাই অন্ধ সেজে আছে, কাহিনী সেই সমাজের। মহাভারতের কারণ ও তো অন্ধ সেজে থাকা, ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র স্নেহে, আর অন্য অনেকের সিংহাসনের প্রতি পরিভাষিত দায়বদ্ধতা, যার পরিভাষা প্রশ্নের মুখে .


 ২০১৬ তে নিজের একটি আলোচনার শুরুতেই লিখেছিলেন "নাটক টা বার বার পড়তে আর দেখতে গিয়ে আমার সব সময় আশ্চর্য ভাবে মনে হয়ে যে আমরা আজকের দিনকে কি আরেকটি আন্তঃসংঘাত এর ভেতর আছি ?

যা কোনো ক্লাসিক কে অসাধারণ করে তোলে সেটা হলো সেই ক্লাসিক এর অপ্রত্যাশিত ভাবে বার বার নিজেকে পুনর্জ্জীবিত করে বর্তমানে পুনঃপ্রবেশ করার ক্ষমতা, আর মনে হয়ে যে ভারতীয় রচনা মহাভারত থেকে উত্তম উদাহরণ এ জিনিসএর হতে পারেনা। যখন ইদানীং আমি আর আমার ছাত্ররা ধরমবীর ভারতীর লেখা অন্ধ যুগ এ পুরাতন কাহিনীর স্বাধীনোত্তর পুনঃ বিবরণ শুনলাম, আমার একটাই কথা মনে হলো। 

নাটকটি, তার পরীক্ষামূলক আকাঙ্খায় এক সাথে অনেক কিছু করতে চেয়েছে।  ভারতী এই নাটকটি তে গ্রীক ট্রাজেডির তত্ত্ব, কোরিক উপাদান, আসন্ন সর্বনাশ এর অংশ, সব কিছু হিন্দি তে আনতে চেয়েছে, সাথে উদ্দীপ্ত কাব্যিক ভাষা ব্যবহার, যা এই সংস্কৃতের মহাউপাদান এর পরিচয়, রেখেছে।  তার সাথে ভারতী মানুষের পরিস্থিতির  নানা অভিন্ন সত্য কেও ধরে রাখতে সক্ষম, যা এক অভিজ্ঞ লেখকের দায়িত্ব, হয়েছেন। মহাভারতের চরিত্রগুলির মূল ধরণ এবং তাদের রাজনীতি, সমাজ এবং পরিবারের ক্ষেত্রে দুর্নীতির বয়স প্রতিফলিত করা 2020-এর মানদণ্ডে অভিনব কিছু নয়। প্রকাশ ঝা-এর 2010 সালের ব্লকবাস্টার রাজনীতি একটি রাজবংশীয় রাজনৈতিক পরিবারের উত্থান এবং পতনের সন্ধান করে, যাকে গান্ধী পরিবার এবং কংগ্রেস পার্টির সাথে তুলনা করা হয়েছে, কিন্তু এটি ইতিহাসের থিমকে দুঃখজনকভাবে পুনরাবৃত্তি করার জন্য পূর্বোক্ত মহাকাব্যটি ব্যবহার করে।

ঠিক এই কারণেই এই নাটক আজ আমাদের সাথে কথা বলে, যে সময় এটা লেখা হয়েছিল, তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি হলেও।  অবশ্যই ভারতী কিন্তু আধুনিক, উনি শ্রী কৃষ্ণ কে এর ভেতর আনেন নি, গল্প টি শুধু মানুষের সংঘাত, ঈশ্বর কে তার থেকে সরিয়েই রেখেছেন। 

  ২০১৬ সালে রবিন দাস  শ্রী রাম কেন্দ্র তে ভারতেন্দু নাট্য একাডেমির প্রযোজনায় এই নাটকটি মঞ্চস্থ করেন, তাতে উনি পরীক্ষা মূলক ভাবে গান্ধারী আর অশ্বত্থামার চরিত্র গুলি তিন জন অভিনেতা কে দিয়ে করিয়েছিলেন। উনি কি সেটা করে এই দুটি  চরিত্রের ভেতর যে ঘৃণা আর প্রতিহিংসা স্ফলন হয়েছিল সেটা কে দৃশ্যপটে আনার চেষ্টা করেছিলেন? আসলে, ব্যাস  ও কি পাঁচ জন পাণ্ডব এর বিপক্ষে একশো জন কৌরব কে দাঁড়  করিয়ে সমান কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন।

তার থেকে ছয় বছর আগে আলোক ভাল্লা যখন দেখলেন যে তার ছাত্র রা মোটামুটি নাটক এর শেষে প্রায় সবাই কৃষ্ণ কে দোষী সাব্যস্ত করে আর গান্ধারীর প্রতি সাহানিভূতিশীল হয়ে যায়, তখন উনি নাটক তার আর একটা অনুবাদ করা স্থির করেন।  উনি নিজের অনুবাদ করার পক্ষে বলেছিলেন ""অবশ্যই বাতিকতার ফল ছিল, কিন্তু বাস্তবিক কারণের পরিচর্যায় এবং দেশের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার সহায়তায়ও বাতিক।"

আর একটি ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন ২০০১ সালে ত্রিপুরারি শর্মা।  সেখানেও পরিষ্কার করা হলো  মহাভারতের আধুনিক আলোচক লেখক দের মতন  প্রধান চরিত্র গুলি বাদ দিয়ে নিম্ন চরিত্র গুলি কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।  তবে অন্নান্য দের মতন কর্ণ কে না নিয়ে, এই নাটকএ অশ্বত্থামা আর গান্ধারী কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।  যদিও অশ্বত্থামার চরিত্র টা নৈতিক ভাবে প্রচন্ড অস্পষ্ট। 

ভারতী, তার নাটকের মুখবন্ধে, যা ভাল্লা অনুবাদ করতে আশ্চর্যজনকভাবে অবহেলা করেছিলেন, ততটুকুই ইঙ্গিত করেছেন। তার নিজের সময়ে, স্বাধীনতার সাথে সাথে দেশভাগের অকথ্য মানবিক ট্র্যাজেডির পরে, ভারতে ধর্মের কথা বলা অসঙ্গত বলে মনে হতে পারে। তথাপি, ভারতী, মানব ভীতির গভীরতার তার নিজের অন্বেষণে আবিষ্কার করেন যে একটি তল (ধারাল) রয়েছে যার নীচে মানবতাকে ডুবতে দেওয়া হয় না।

ভারতী, তথাপি, আইন-দাতা হিসাবে কৃষ্ণের আধিকারিকতাকে পুনরুদ্ধার করছিলেন, নীরব, অদৃশ্য, কিন্তু মানব ভাগ্যের পথে সর্বব্যাপী? কারণ শুধুমাত্র কৃষ্ণই ধর্ম জানেন এবং সমর্থন করেন; শুধুমাত্র তিনিই সর্বোত্তমভাবে অসংলগ্ন, জিনিসের ফলাফলে তার কোন ব্যক্তিগত অংশীদারি নেই, নৈতিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য যা করতে হবে তা করছেন।

এই কারণেই কৃষ্ণের সমালোচকরা এত আখ্যানের প্রশস্ততা দিলেও অবিশ্বাস্য রয়ে গেছেন। তাদের প্রধান যুক্তি সাধারণত বিশৃঙ্খল যদি প্রশ্নবিদ্ধ আবেদন, “আমরা একমাত্র যারা নৈতিক কোড ভঙ্গ করা হয় না. কৃষ্ণের দিকে তাকাও; তিনি ধর্মের প্রতিটি নীতি লঙ্ঘন করেছেন।"

পাঠকরা প্রথমে কিছুটা ম্লানভাবে বুঝতে শুরু করেন তবে নাটকটি এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আরও নিশ্চিতভাবে তা হল যে যদিও পূর্বের সমস্ত ইচ্ছাকৃতভাবে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্ম লঙ্ঘন করেছিলেন, পরে কৃষ্ণের কাজগুলিকে অজুহাত হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন, কৃষ্ণ কেবল তার চেতনার প্রতি মনোযোগ দিয়ে কঠিন সময়ে ধর্মকে সমর্থন করেছিলেন, যদি প্রয়োজন হয় তার বর্ণনা তা একটু দুমড়ে দেয়া  পার্থক্য মৌলিক.

ভারতী দেখানোর প্রয়াস করেছেন যে, আমরা যদি মানুষ থাকতে চাই, তবে আতঙ্ক বা ন্যায্যতা যাই হোক না কেন, মানুষকে অবশ্যই নীতি-নৈতিকতা, ধর্মের প্রতি আঁকড়ে থাকতে হবে। অশ্বত্থামা, যে ব্রাহ্মণ তার মনুষ্যত্ব হারিয়েছেন তিনি হলেন প্রত্নতাত্ত্বিক আধুনিক গণহত্যার ব্যক্তিত্ব। পান্ডবদের নির্মূল করার প্রতিশোধের সাধনায় মানুষের মনুষত্বের নিম্নতম স্তর থেকে নীচে নেমে তাদের অনাগত সন্তানদের কাছে নেমে আসার জন্য তিনি একাই শান্তি ছাড়া বিশ্বে বিচরণ করার নিন্দা করেছেন।


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

शब्द रहस्य रचनायें

हिन्दी एक सशक्त, सजग, सजीव, आत्मिक भाषा है। मेरा प्रयास है चन्द शब्द चुन कर उनकी खूबसूरती का आनन्द उठाना, और आपके साथ सांझा करना। खूबसूरत रहस्य -१  शब्द रहस्य -२- शैल, शिला, शैली  शब्द रहस्य ३ - जल  शब्द रहस्य ४ - अग्नि   शब्द रहस्य - ५ - मिट्टी  शब्द रहस्य - ६  सोना  अनुप मुखर्जी "सागर"

About Me

A Chartered Accountant by profession,  A consultant to clients,  A Teacher to trainees and students, A parent to child who submits like that A Friend of Friends and friends of friends, An enemy of those who want me as that. A writer, a blogger, a poet, a story teller. Share my experience, read my blog. know me better, read my blog. Read me here, read me at pratilipi.com at https://hindi.pratilipi.com/user/anup-mukherjee-bny878m9u8?utm_campaign=general&utm_source=web_share My Life Died many deaths, and then realized that I have to Live for the day I wake up, and I do it now. My policy, Live the day you are alive, that's all. Share a part of your thoughts, if you read me.

Know Contents; Know Me; Know Us

CA Anup Kumar Mukherjee, 67 Fellow member of the Institute of Chartered Accountants of India; IS Auditor; a Bachelor of Commerce from SRCC, University of Delhi is the brain behind the formation of the group.  CA Mukherjee is a  Management Consultant, Author, and a Personality Coach. He looks after the MSME businesses of his clients guiding them to follow solid principles to sail to success. CA Mukherjee is also the Founder member of the  PIO Chamber of Commerce & Industry,  currently holding the post of Treasurer and managing its Indian operations from its office in New Delhi. Click here   for the Index of English Essays Click here for   the Index of English Stories and Poems Click here for   the Index of Bengali Stories and Poems  Click here for  the Index of Hindi  Stories and Poems  Click here for   the Index of Photographs PREFACE Being a Chartered Accountant, a thorough professional, with an addiction to reading, ...