বাবা, অজন্মা রয়ে গেল!
সাগর পুরসভার অফিস থেকে বেরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ফেললো, "বাবা, তুমি অজন্মা রয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত। ব্যাস , আজকেই তুমি মরে গিয়েই জন্মালে শেষ পর্যন্ত। সবাই কে বলতে ঈশ্বর জন্ম মৃত্যুর বাইরে, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ, এদের জন্ম নেই, মৃত্যু নেই। তা তোমার জন্মের প্রমাণ তো হলোনা, মৃত্যু তেই প্রমান হলো তুমি জন্মেছিলে। "
সাগর দেবশর্মা, আজ বাবার মৃত্যুর ৩০ দিন পর পৌরসভার থেকে বাবার মৃত্যুর শংসাপত্র, মানে আর কি ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে বেরুলো।
হাঁ , তার বাবা তো অজন্মা রয়ে গেলো। কথা তো অর্ধ সত্য, কিন্তু কাগজে তা পূর্ণ সত্য। সাগর জন্মেছিলো ১৯৮২, জেলা হাসপাতালে জন্মেছে, জন্মের শংসাপত্র তো পেয়ে ছিল। প্রমান ছিল যে সে কবে, কোথায়, কার ঘরের ছেলে হয়ে জন্মেছে।
তার দাদু ৮০ বছর বয়েসে ১৯৮৭ তে মারা গিয়েছিলো। দাদুর নামে জমি, বাড়ি, পুকুর, সব ছিল. ব্যাঙ্ক এ কিছু টাকা ছিল। ব্যাঙ্ক এর টাকা নিয়ে কোনো অসুবিধা হয়নি কারণ সব একাউন্ট দাদু আর বাবার এক সাথে ছিল। বাবা কোনো দিন ইস্কুল এ ম্যাট্রিক পাস করেনি তাই ইস্কুল এর জন্ম শংসাপত্র ছিলোনা। বাবা আর দাদু চাষ বাস করতো, পুকুর এ মাছ ছিল, যজমানী করতো, সংসার মোটামুটির ওপর চলে যেত। সাগর আর তার বোন ইস্কুল এ পড়াশোনা করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ইত্যাদি করেছিল, সে অন্য কথা। দাদু বলতো রোজগার করে খাবার ক্ষমতা আছে, রেশন কার্ড নেবোনা। তাই হয়নি।
এবার আসল কথা, সাগর এর বাবা, গঙ্গা দাস দেবশর্মা নিজের বাবার মৃত্যুর পর পঞ্চায়েত আর জেলা দফতর এ অনেক চক্কর লাগালো। জমি, পুকুর আর ভিটে তা নিজের নামে করাবার জন্য। জমির কাগজ আছে, কিন্তু গঙ্গা দাস যে জন্মেছিলো, তার তো কোনো কাগজ নেই ! হায় ভগবান !
গাঁয়ের মোড়ল দের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক না থাকায় তারা বলে দিলো,মশাই, আপনি তো এ গেরামে জন্ম নেন নি, আমাদের আপনাকে কাগজ দেবার অধিকার নাই। যান, নিজের মামা বাড়ির গ্রাম এ যান।
মামা বাড়ির গ্রাম এর সুরাহা কিছু হলো না, মামারা সবাই গ্রামের ভিটে বিক্রি করে অনেক দিন প্রবাসী।
১৯৮৭ থেকে ২০২০, গঙ্গা দাস প্রমান করতে পারলো না যে সে জন্ম নিয়েছিল। সে আজন্ম অজন্মা রয়ে গেলো।
২০২০ তে গঙ্গা দাস এর মৃত্যু সংসা পত্রে লেখা হলো মৃতক গঙ্গা দাস দেবশর্মা , পিতা ঈশ্বর যমুনা দাস দেবশর্মা, আবেদক সাগর দেবশর্মা , পুত্র।
গঙ্গা দাস দেববর্মা কে শেষ পর্যন্ত মরতে হলো এই প্রমাণ করার জন্য যে সে জন্মেছিলো। বেঁচে থাকা কালীন সে অজন্মা রয়ে গেলো।
ঠিক যেন ১৯৮৭ থেকে ২০২০ সে সরকারি অফিসের মোষেদের থুড়ি ,দু কান কাটা কর্মচারিদের সামনে সানাই বাজিয়ে গেলো আর তারা পোঁ ধরে থাকলো, তুমি জন্মাওয়ানি।
অনুপ মুখার্জি "সাগর"
খুব সুন্দর satire. চালিয়ে যা।
ReplyDeleteখুব সুন্দর
ReplyDeleteখুব ভালো
ReplyDelete