আমি যে দেখেছি তারে যাকে দেখা যায়না -১
প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। পরিষ্কার মনে আছে।
বাংলার গ্রামের মূল বাসিন্দা আমি, গ্রাম, কারণ ছোট থেকে শুনতাম আমাদের বাড়ি গ্রামে। আমি তখন সবে ১৬ পার করেছি, সেই আমার গ্রামের বাড়ি প্রথম যাওয়া। ছোট বেলা তো দক্ষিণ ভারতের নানা শহরে কাটিয়েছিলাম, আমার সুযোগ হয়নি গ্রাম বাংলা দেখার, যদিও আমার দাদা, যে আমার থেকে ৪ বছর বড়ো, সে নাকি একবার দেখেছিলো।
একটা পারিবারিক বিবাহ উপলক্ষে সবাই ট্রেন চেপে বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়া গেলাম। আমাকে বলে দেওয়া হয়ে ছিল যে হাওড়া স্টেশন এ যা ভিড় দেখবো সেটা আগে দেখিনি, তাই খুব বেশি আশ্চর্য হয়নি।
চার দিনের মাথায় বিয়ের সব কাজ শেষ এবং আত্মীয়রা যেতে শুরু করলো, আর আমি উৎসাহিত অপেক্ষা শুরু , কবে কোলকাতা দেখবো, লোকাল ট্রেন, ট্রাম, জাদুঘর, ভিক্টোরিয়া, গঙ্গার ধার, ফিটন গাড়ি, ইত্যাদি ইত্যাদি। সব কিছুর গল্পঃ শুনে শুনে সামনে যেনো সিনেমার মতো ভাস্ট্ত ভাস্ট্ত
বিকেল পাঁচটা, সবাই বসে গল্প করছি, হটাৎ মামা বললো, চল তোরা দুজন তৈরী হয়ে নে। পাশের লোকাল স্টেশন ডানলপ ব্রিজ থেকে ৭:১২ লোকাল ধরে তোদের শিয়ালদা বাজার দেখিয়ে আসি। যেমন বলা তেমনি কাজ। মামা, বাবা, দাদা আর আমি, চার জনা বেরুলাম একটু পর। একটা অটো ধরে ডানলপ, সেখানেই ওপর এ লোকাল ট্রেন স্টেশন। ছোট্ট দু প্লাটফর্ম এর স্টেশন, আলো আঁধার চারিদিকে। ট্রেন আসার ঘোষণার পর মামা একটি জায়গায় দাঁড়াতে বললো যে সেখানে কোচ সুবিধের হবে। কিসের সুবিধে বুঝতে পারলাম না, জিগ্যেস করার দরকার মনে করলাম না।
প্লাটফর্ম প্রায় খালি, ট্রেন ঢুকলো। ট্রেন অল্প কিছু সেকেন্ড রুখবে, দাঁড়াবার সাথে সাথে বাবা, দাদা আর মামা চট করে চড়ে গেলো, আমি শেষে চড়বো। ট্রেন একটু উঁচু, ডান্ডা ধরে প্লাটফর্ম এ শেষ পা টি রাখলাম, পরের তা ট্রেনে ! হটাৎ দেখলাম আমি ট্রেনের নিচে যাচ্ছি, চিৎকার করে উঠলাম। দাদা, বাবা, মামা, তিনজনেই ফিরে চিৎকার দিলো। প্লাটফর্ম এ একটা ফাটলের ভেতর আমার পা চলে গেলো, ট্রেন হর্ন দিলো, গার্ড সিগন্যাল দেবে যে , আমি তো শেষ ? আমার শরীর টা প্লাটফর্ম র ট্রেনের মাঝে ঢুকে যাচ্ছে।
হঠাৎ আমার বগলে দুটো শক্ত কিছু অনুভব করলাম, এক ঝটকায় আমার সেই অতলে তলিয়ে যাওয়া শরীর টা তুলে নিলো। পা প্লাটফর্মে, হাত দুটো আমাকে ঘুরিয়ে ট্রেনের দিকে করে দিলো, মামা, বাবা আমাকে টেনে নিলো সাথে অন্য যাত্রীরাও। ট্রেন তখন ছেড়ে দিয়েছে সেই মুহূর্তে। আমার পা যন্ত্রনা, কিন্তু সবাই আনন্দিত, স্বস্তির নিঃস্বাস, যে বেঁচে আছি। পরের স্টেশন এ নেমে ট্যাক্সি করে আগে ডাক্তারখানা, তারপর বাড়ি। বুঝতে পারিনি কার হাত আমাকে টেনে তুললো, কেউ তো তাকে দেখিনি।
আমি কি তাকেই দেখলাম যাকে দেখাযায়না ? যে অদৃশ সে কি আমাকে টেনে তুললো ?
উনি আসেন মানুষেরই রূপে, আমরা চিনতে পারিনা।
ReplyDelete