আমরা কি ধান গাছের তক্তা দিয়ে বানানো তক্তপোষে আকন্দ গাছের ছায়ায় বসে সোনার পাথর বাটি তে কাঁঠালের আম সত্ত খেতে খুব ভালো বাসি আর কিছু মানুষ সেটাই খাইয়ে খাইয়ে আমাদের বোঝাতে থাকে যে আমাদের পেট ভরা আছে।
স্বপ্নিল ৯টা ৩৫এর আপ লোকাল থেকে বেলমুড়ি তে নেমে নিজের বাইক তা স্ট্যান্ড থেকে নিলো। আজ বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গিসলো। চারদিকে অন্ধকার, ঝিঁঝিঁ পোকার দল এর কোরাস, সাথে বাইকের আলো নেভালে আকাশের চাঁদ আর তারা ছাড়া কিছুও দেখা যায়না। বাইক টা স্ট্যান্ড থেকে নিয়ে দোকান থেকে একটা সিগারেট ধরালো , শেষ করে ২০ মিনিট এর রাস্তা কাটাবে। রাস্তা খুব ভালো, সেদিক থেকে চিন্তা নেই, শুধু পিচ তা খুঁজে নিতে হয়ে, তা রোজ এক রাস্তায় বাইক চালাতে চালাতে সব খানা খন্দর মোটামুটি মুখস্ত। বাড়ি গিয়ে মা এর হাতের রান্না খেয়ে ঘুম। সকাল এ আবার বাইক, লোকাল, ফেরি, হাঁটা। বিকেলে সেই হাঁটা,বাস , লোকাল আর বাইক।
সিগারেট তা শেষ হবে, তখন লক্ষ করলো পাড়ার স্বপ্না স্টেশন থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক দেখছে। এর মধ্যে ডাউন লোকাল এসেছে, স্বপ্না নিশ্চই তাতেই এসেছে। দুজনে দুজন কে ভালো ভাবে চেনে কারণ দশ ক্লাস পর্যন্ত এক সাথে পড়া সোনা করেছে, এক দম ছোট থেকে চেনা।
স্বপ্নিল এগিয়ে গিয়েই ডাকলো, এই স্বপ্না , তুই এতো রাতে কি করছিস ? সব ঠিক আছিস তো ?
'হাঁ রে বাস , সব ঠিক আছে, তুই অফিস থেকে ফিরছিস ?'
'আর কি, আজ একটু দেরি হয়ে গেছে না হলে রোজ ৮টার ভেতর এসে যাই। তা তুই এতো দেরি করে এসেছিস, বাড়ি যাবি কি করে ?'
'আর বলিস না রে, ভেবেছিলাম ৭তার ভেতর এসে যাবো, এরকম ফেঁসে গেলাম। অফিসে দিল্লি থেকে ডিরেক্টর এসেছে। এখানকার ব্যাপার জানেনা। ম্যানেজার কে কত করে বললাম আমাকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিতে, সেই বসিয়ে রাখলো। খুব ভয় করছিলো, চিন্তা হচ্ছিলো কারণ এখন তো কিছু পাবো না। '
'যাক, আমার যে আজকের দেরি হলো সেটা ভালোই হলো, কি বল। তোকে আর ভাবতে হবে না, বাইক এ ছেড়ে দেব। '
'সে আবার বলতে, পেয়েছি যখন। "
বাইক চলা কালীন কোনো কথা কেউ বলেনি কারণ রাস্তার দুরবস্থা রাতের অন্ধকার ড্রাইভ করা ছাড়া আর কিছুও করার চান্স দেয় না। দুজনে বাইকে গ্রাম এর কাছাকাছি পৌঁছে দেখলো রাস্তায় ব্যারিকেড লাগানো। ব্যারিকেড এ কিছু পার্টির লোকজন দাঁড়িয়ে ছিল। স্বপ্নিল তাদের দূর থেকে চিনতো, কাছ থেকে চেনার কোনো দিন স্পৃহা হয়ে নি। স্বপ্নার ও এক ব্যাপার। দুজনের জীবনে আগে লেখা পড়া, তার পর বাড়ি র চাকরি, এগুলোই মানে রাখতো। পার্টি করার দরকার বা অবসর কিছুও বাড়ি তে কারো ছিলোনা।
স্বপ্নিল ব্যারিকেড এড়িয়ে বাইক বার করতে গেলো, হঠাৎ এক জন এগিয়ে এসে বাইকের সামনে দাঁড়ালো।
' এই তুই তো বটতলার ঘোষ বাড়ির না ? আর, এই, তুই তো মুখুজ্যে কাকুর মেয়ে না ? তোরা এতো রাতে কোথা থেকে আসছিস ? কি করছিস রাতে রাস্তায় ?'
স্বপ্নিল আর স্বপ্না , দুজনেই প্রমাদ গুনলো কারণ এদের মুখ আর চরিত্র বেশ কটা গ্রামে সর্বজন বিদিত গোপন কথা ছিল।
'দেখুন দাদা, আমরা দুজনেই স্টেশন থেকে আসছি, ফিরতে দেরি হয়েছে, যেতে দিন। '
'আ হা রে সোনা ছেলে আমার, আমাদের সামনে নেকামি দেখিয়ে লাভ কি রে। দে, বাইক এর চাবি তা দে, আর ওই পাশে বস দুজনে। আমরা তোদের বাড়ির আর পাড়ার লোকেদের ডেকে দিচ্ছি, তারাই বুঝবে।'
'দেখুন দাদা, খামোকা কেন ঝামেলা বাড়াচ্ছেন, আমরা সোজা স্টেশন থেকে আসছি। আমার বাইক পার্কিং এ থাকে। দেরি হয়েছে, যেতে দিন। '
'দেখ আবার বলছি, নেকামি করিস না। পাড়ার লোক ডেকে যদি বলি যে তোরা রাস্তায় কেচ্ছা করছিলিস আর আমরা ধরে ফেলেছি তো তোদের বাড়ি গুলোর কি বারোটা বাজবে সেটা দেখে নে। '
এবার স্বপ্ন বললো, 'দেখুন দাদা, আপনারা কেন খামোকা কথা বাড়াচ্ছেন। আপনি আমাদের বিরক্ত করছেন খামোকা। আর যত দূর আমাদের বাড়ির কথা, তা আমাদের বাড়ির লোকেদের আমাদের ওপর বেশি ভরসা আছে, তাদের ডেকে কোনো লাভ বা লোকসান কিছুও হবে না। '
'বেশি বাড় বেড়েছে, আমরা চুপ করে থাকি তা বলে মনে করেছিস কিছু জানিনা। তোর বাবা তোদের বাগানের বেড়া তে গাছ পালা সব কেটে দিলি, জানিস না গাছ কাটার জন্য পঞ্চায়েত এর অনুমোদন দরকার। কাল পঞ্চায়েত এসে জরিমানা জমা করে যাবি।'
'এটা কি রকম হলো দাদা, আপনি বাস্তবে কী চাইছেন ? আমাকের বেড়া তে সেরকম কোনো গাছ ছিল না যার জন্য কোনো অনুমোদন লাগবে। বেড়া তে শুধু আকন্দ গাছ ছিল সেগুলো কেটে অন্য ছাড়া লাগিযেছি। '
'আমাদের বোঝাতে চাইছিস যে আকন্দ গাছ তা গাছ না? জানিস ওই আকন্দ গাছ এর ছায়া তে বসে কত মানুষ বিশ্রাম করতো ? আর তুই বলছিস যে আকন্দ গাছ তা না ?'
'দেখো দাদা, ফালতু সময় নষ্ট করে লাভ নেই, আকন্দ গাছে ছায়া তে মানুষ বিশ্রাম করতে আজ অব্দি কোনো মানুষ দেখেনি কিন্তু আপনার সাথে তর্ক করে লাভ নেই। আমি ২০-৫০ টাকা দিচ্ছি, যেতে দিন। সারা দিনের ক্লান্তি আছে, বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম করতে হবে। '
এবার ছেলে টি সোজা কোথায় এলো, 'দেখ তোরা দুজনে কিছুও কর আমার কি যায় আসে। তোর বাড়ির আকন্দ গাছের তলায় তুই যা ইচ্ছে কর আমার কিছু যায় আসে না । সোজা সুজি ১০০ টাকা দে আর বাড়ি যা।'
স্বপ্নিল আর স্বপ্না একটু কথা বলে নিলো, স্বপ্নিল পার্টি দাদা টি কে ৫০ টি টাকা দিলো শুধু এই সার্টিফিকেট নেবার জন্য যে আকন্দ গাছ আর অন্য গাছ আলাদা।
বাইক নিয়েই বেরিয়ে স্বপ্নিল একটাই কথা ঠিক করলো, পিচ বিহীন পাকা রাস্তা থেকে সোজা সুজি কাঁচা রাস্তা দিয়েই যাওয়া আসা করা ভালো। আকন্দ গাছের নিচে গাড়ি দাঁড় করাবার চিন্তা করতে হবে না '
১৪ জুন ২০২০
খুব ভাল লাগল। পাকা রাস্তার tax ।
ReplyDelete