১৯৭০
ওগো, আমার খুব অমুক শাড়ি টা কিনতে ইচ্ছে করছে এবারের পুজোয়। পাঁচ বছর হলো বিয়ের, একটু কিছু আলাদা বেবস্থা হতে পারবে?
না গো, পুজোর বোনাস এ তো বাড়ি সারাতে হবে। তার থেকে কিছু ম্যানেজ করে অন্য যেটা সেবার দেখেছিলাম সেটা কিনে নেবো। তোমার ওপর খুব মানাবে ওটা।
ঠিক আছে গো। বাড়ি টা মেরামত করা খুব দরকার। ওটাই আগে করি। যা জামা কাপড় আছে বছর টা স্বচ্ছন্দে কেটে যাবে।
১৯৮০
ওগো শুনছো। পুজোর বাজার কবে করবে। আমার খুব ইচ্ছে ওয়াহিদা রহমান যে ধাঁজের শাড়ি টা সেদিনের সিনেমা তে পরে ছিল সেই রকম শাড়ি একটা কিনি। পাঁচ বছর হলো বিয়ের, এবার খুব ইচ্ছে করছে একটা চোখ ঝলসানো শাড়ি কিনতে।
পুজোর বাজার তো করবো, কিন্তু কি যে বলো। ওই শাড়ি তো আমার সারা বছরের মাইনে তেও আসবে না। তুমি বরং এবার একটা ভালো তাঁতের শাড়ি পরে দেখো।
ঠিক আছে, যা তুমি ভালো বেসে দেবে আমার তো সেটাই ভালো। সামর্থের বাইরে কেনার তো মানে নেই।
১৯৯০
শোনো ডিয়ার, পাঁচ বছর হলো, প্রতি বছর পুজোয় সেই শাড়ি। এবার আলাদা কিছু কেনা যেতে পারে?
পুজো তে আবার আলাদা কি কিনবে গো? প্যান্ট শার্ট পরনে ধরবে কি এবার?
চুড়িদার কুর্তি তো পরতে দিলে না গত পাঁচ বছরে আবার প্যান্ট শার্ট এর নাম নিচ্ছে। নাহ, প্যান্ট শার্ট না, তবে একটা সুন্দর দেখে চুড়িদার কিনতে চাই। একবার তো কিনে দাও। জানো আমার বিয়ের আগে থেকে স্বপ্ন ছিল। টা আমাদের কি আর স্বপ্ন দেখতে আছে? এমন ভাগ্য, মেয়ে হয়ে জন্মে যেনো অপরাধ করলাম।
আহঃ, আবার কোথাকার কথা কোথায় টেনে যাচ্ছ। দেখো পুজো তে শাড়ি নাও, এবার জন্ম দিনে চুড়িদার কিনে দেবো।
সত্যি দেবে তো বলো।
আহঃ আমার সোনা, সত্যি, সত্যি, সত্যি। এই তিন সত্যি করলাম।
তুমি কি ভালো না। আমাকে এত ভালো বাসো ।
(স্বগোক্তি) ডবল খরচ। উফফ, কি যে করি।
২০০০
এই, শোনো।
হুম
এই, শোনো না।
হুম।
কি খালি হুম হুম করে যাচ্ছে। স্বপ্ন তে আছো না জেগে কথা বলছো, তাই তো বুঝতে পারছিনা।
হুম, জেগেই আছি। স্বপ্ন থেকে ধরাতলে তো বিয়ের একবছরের ভেতর এসে গিসলাম। আজ খুব ক্লান্ত। বলো, কি বলছো।
আচ্ছা, তুমি কি একা খাটো না কি? আমিও তো সমানে সমানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেটে যাচ্ছি আর তোমার রোজ ওই এক কথা, খালি ত অফিস চেয়ার এ বসে গল্পঃ করা, হম্বি তম্বি করা, আর কম বয়েসী মেয়ে দের নিয়ে ফষ্টি নস্টি করা। আমি যেন জানিনা কিছু। সব বিরক্তি শুধু আমার কথা তে। কি কুক্ষণে যে ....
উফফ, আবার এই মাঝ রাত এ শুরু করোনা। বলো কি বলার। পাঁচ বছর হলো বিয়ে করেছি, এত দিনে খুব ভালো বুঝে গেছি ভালো ঘুম টা ওই বাসে ট্রেনে হয়ে।
বলো, ঘুমের তো পাখা গজিয়ে সে গেছে পেঁচা দের আড্ডা তে।
এত রেগে যায় কেনো। আচ্ছা, তুমি আমাকে কত ত ভালো বাসো।
মানে, ভালোবাসার মাপ কী কিলো হিসেবে না লিটার হিসেবে।
কি যাতা বলো। আচ্ছা, তুমি আমাকে ভালো বাস, এটা তো ঠিক?
আজ পাঁচ বছর পর তোমার কি সন্দেহ হচ্ছে?
না, এমনি একটু সোহাগ করছি। কোনো দিন তো বলনা যে আমাকে ভালোবাসো, তাই। আচ্ছা ছাড়ো, এটা তো মানো যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।
সেটা তুমি জানবে, আমি কি করে বলবো।
কোনো কথার সোজা উত্তর দেবে না কি? শোনো না, এবার পুজো তে আমার ওই একটা লেহেঙ্গা চোলি চাই। আমি কিনবই কিনবই কিনবই, আর তোমাকে বেবস্থা করে দিতেই হবে।
মানে তুমি ঠিক করে নিয়েছো যে ওটা কিনবে, যেটা নিয়ে তিন মাস আগে কথা বলেছিলে। কিন্তু ওটা কিনলে তো আর কিছুই কেনার বাজেট থাকবে না।
তা আমি জানিনা, যদি তুমি আমাকে ভালোবাসো আর মনে করো যে আমি তোমাকে ভালোবাসি তাহলে ওটা আমার চাই।
মনে ওটা হলো ভালোবাসার ম্যাপ কাঠি।
যা ইচ্ছে বলো, আমি ওটা ছাড়া থাকবনা।
কিন্তু ওটা পরবে কখন?
সে আমার ব্যাপার। তবে ওটা চাই, চাই, চাই।
ঠিক আছে, আমার জন্য কিছু কিনবো না, তোমার বিশেষ জামার গুষ্টি ....
কি বলছো, আমার গুষ্টি তুলে বলতে যাচ্ছ?
না না, তোমার কেন, আমার। যাক অনেক রাত হলো। ঘুমও আর ঘুমোতে দাও।
২০১০
ইয়ার, ঘুমিয়ে পড়লে কি?
হুম, ঘুমোবার চেষ্টায় আছি। বলো।
আজ না মার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। মা না সব সময় তোমার কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে। পাঁচ বছর হলো বিয়ের, কি করেছ বলো তো মা কে, তোমাকে এত কেনো ভালো বাসে।
মা, সে তোমার ই হোক আর আমার, মা তো মা। সন্তান দের ভালো বাসতেই পারে। কেনো, কি হলো।
না, ঠিক আছে। জানো, তোমার ভায়রা তোমার সালী কে কী কিনে দিয়েছে জানো?
তোমার ভগ্নিপতি তোমার বোন কে কি দিয়েছে আমি কী করে জানবো।
আন্দাজ ত লাগাতে পারো।
না, কোনো ইচ্ছে নেই। বলে দাও।
ওকে না ব্রান্ডের জিন্স, জ্যাকেট, আর একটা খুব সুন্দর টপ কিনে দিয়েছে।
সে ওদের ব্যাপার, কিনতেই পারে। আর ওর চেহারাও আছে, ভালো লাগবে ওর ওপর।
তোমার তো ওর সব কিছুই ভালো লাগে। তা লাগুগ, কিন্তু এবার আমাকেও ওই রকমের জামা কিনে দাও, দুজনে এক সঙ্গে পরে ঘুরবো।
ওহ, সেই জন্য এত ভালোবাসা উৎলে পড়ছে। যদি না কিনে দি।
আমি তো জিজ্ঞেস করছিনা, আমি সোজা বলছি যেকোনো ভাবে কিনে দিতে হবে।
তাহলে তো কথাই শেষ। গুড নাইট।
২০২০
সোফা তে বসে ঘুমিয়ে পড়েছি প্রায়। অফিসের কাজ করতে করতে কখন যে ল্যাপটপ টা টেবিল এ নিজেই বন্ধ হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। মোবাইল ফোন টা বেজে উঠলো।
বউয়ের ম্যাসেজ এসেছে শোবার ঘর থেকে।
ডার্লিং, তোমাকে জাস্ট রিমাইন্ডার দিচ্ছি। অনলাইনে আমার স্কার্ট আর টপ, তার সঙ্গে ম্যাচিং ইমিটেশন সেট কিনতে ভুলো না। পুজো টা তো কোরোনা ভেস্ত করে দিলো। আমার কিন্তু এ গুলো চাই। না দিলে সোজা কিন্তু 498 ফাইল করে দেবো। মনে থাকে যেন। ভুলো না আমার ভাইয়ের ভায়রার বন্ধু CBI তে আছে।
দ্বিতীয় ম্যাসেজ : ডার্লিং, আমি কিন্তু 498 টা মজার ছলে বললাম। আমি জানি তুমি আমাকে অনেক অনেক ভালো বাসো। আমিও love you too much। জিনিস গুলো কিন্তু এই সপ্তাহে চাই। আগামী সোমবার আমাদের মহিলা অধিকার মঞ্চের সদস্য দের ডিনার পার্টি আছে। তাতে পরবো।
শেষ ম্যাসেজ: Good Night। Sweet Dreams। Love you darling।
অনুপ মুখার্জি "সাগর"
😃😃😃 আজকালের জীবনের সার। Great.
ReplyDeleteদুর্দান্ত হয়েছে ভাই
ReplyDelete