"দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান"
এই স্লোগান দিতে দিতে যখন হীরক রাজা নিজের পুরো মন্ত্রী সভা কে নিয়ে মানুষের সাথে হাত মেলালো, তখন সবাই বুঝলো হীরক রাজার মগজ ধোলাই হয়ে গেছে, এবার এই রাজা ভালো কাজ করবে। সেই আশা তে মানুষ "রাজা হলো খান খান, এবার জনগণের রাজ্য, করো রাজার জয় গান" গাইতে গাইতে রাজা কে তার মহলে আবার স্থাপিত করলো।
উদয়ন পণ্ডিত কে শিক্ষা ব্যাবস্থার হেড মাস্টার বানানো হলো, বৈজ্ঞানিক এর মগজ ধোলাই মেশিন রাজ ভবন থেকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় বসানো হলো। গুপী বাঘা নিজেদের দেশে ফিরে গেলো, আর সেখান থেকে আর আরো অনেক দেশ থেকে হীরক রাজা কিছু বিশেষজ্ঞ নিয়ে এলো শিক্ষা ব্যাবস্থা ঠিক করার জন্য।
বেশ দুই তিন দশক চলে গেলো। হীরক রাজার খনি তে এখনও কাজ চলছে, হীরা আছে, মজুর দের এখনও টাকা নেই। ইস্কুল গুলি চলছে, কিছু হলেই সেখানে গুলি চলার দৃষ্টান্ত বেশ কটি। ভালো ছাত্ররা পাস করে দেশ ছেড়ে চলে যায়, অন্যরা রাজার মন্ত্রী দের পা চেটে কিছু না কিছু কাজ জোগাড় করে। খনি তে মজুর, রাস্তায় চা আর আলুর চপ, সে কাজ ও প্রচুর।
দেশে নতুন করে হাওয়া উঠছে, আবার থেকে প্রজাতন্ত্র চাই, এরকম এক দিন, হীরক রাজা বিশেষ সভা ডেকে বসলেন, সবাই কে বসতে বললেন।
রাজা : মন্ত্রীগণ, তোমরা সবাই গত কয়েক দশক ধরে বেশ আমার নামে রাজত্ব করছো, আর শুধু নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছো।
শুনেই সব মন্ত্রী এক সুরে বলে উঠলো: কি যে বলেন মহারাজ, আমরা সারা দেশ ঘুরে ঘুরে দেখছি কাজ হচ্ছে কি না, আর আজ আপনি বলছেন নাকে তেল দিয়েই ঘুমোচ্ছি, এইটা তো ঠিক না মহারাজ।
পূর্তি মন্ত্রী বলে উঠলো: মহারাজ, তেলের যা দাম হয়েছে, কোনো রকমে রান্না করার তেল টা কিনতে পারি, তা নাকে কি করে দেব স্যার ?
রাজা :ভেবেছো কি আমি কিছু জানিনা, কত বছর পরে তেল কেনার দরকার পড়ে তোমাদের বাড়ি? প্রতি বছর তো ওই তেলের ঘানি থেকে সোজা তেল তুলে নিয়ে চলে আসো বিনা পয়সায়, আর তার অংশ টুকু আমাকে দাও না, আবার বড়ো বড়ো কথা, চুপ।
রাজার হুঙ্কার শুনে সব মন্ত্রীগণ পূর্তি মন্ত্রীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আর কী, রাজা তাদের হুমকি দিয়ে বসতে বললো।
রাজা: শোনো সবে মন দিয়ে, রাজ্যে অশান্তি বাড়ছে অনেক। উদয়ন পন্ডিত আবার বলতে শুরু করেছে, আমি নাকি হিটলার! তা এই হিটলার যে কে তা যদিও জানিনা, তবে যে ভাবে বলে, সেটা তো সম্মান জনক না। আবার আসে পাশে সব দেশেই তো যখন তখন নির্বাচন হচ্ছে, তাই এবার আন্তর্জাতিক সম্মান রক্ষার জন্য আমাদের কে যে নির্বাচন করতে হবে, সাধারণ নির্বাচন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী: বলেন কি মহারাজ, সাধারণ নির্বাচন করলে তো যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াবে, আর যদি কেউ জিতে যায় তাহলে তো আমাদের গদি যাবে।
রাজা : এই শিক্ষা মন্ত্রী, বলো তো কত স্নাতক বা তার বেশি লেখা পড়া জানা মানুষ দেশে আছে?
শিক্ষা মন্ত্রী: তা মহারাজ খুবই নগন্য। তাদের তো কাজ নেই, তাই তারা শুন্ডি, হাল্লা, আর অন্য সব দেশে চলে যায়.
রাজা: ঠিক তাই, বুঝলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, যখন দেশে উচ্চ মাধ্যমিক এর গণ্ডি ছাত্ররা পেরুতে পারেনা, আর যে যতই পড়াশোনা করুক না কেন, ক্ষুধা, বসত বাড়ি আর বসন, এই তিন ঘানি তে সবাই কে এমন পিষে রাখতে হয়ে যে তারা কিছু চিন্তা করার সময় না পায়।
মন্ত্রিগণ: ঠিক, ঠিক, ঠিক।
রাজা: তবুও এখন আবার থেকে কিছু মানুষ জড়ো করা হয়েছে, জনগণের থেকে রাজা নির্বাচন করতে হবে, আর এবার আমরা তাই করবো।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী: মহারাজ, অভয় দেন তো বলি। মানুষ যদি আমাদের ভোট না দেয় ত আমরা তো মাঠে মারা যাবো।
রাজা: তা তোমরা সবাই এরকম বসে বসে গাবদা গবদা হয়েছো যে তোমাদের ক ' জন কে তো বলি দিতে হবে, নাহলে তো আমার গদি থাকবে না।
মন্ত্রী রা সব ভয় পরস্পরের দিকে তাকালো।
রাজা: শোনো হে অর্থ মন্ত্রী, হীরের দাম বাড়িয়ে দাও আর বল যে জনগণের কল্যাণার্থে যার কাছে যত হীরে আছে তা সরকার বেশি দাম দিয়ে কিনবে। সবাই যেনো সব হীরে বিক্রি করে দেয় আর যদি কেউ না করে তার বাড়ি আয় কর বিভাগের লোক পাঠিয়ে হীরা বার করার কাজ তোমার।
অর্থ মন্ত্রী: আজ্ঞা মহারাজ, তাই হবে।
রাজা: শোনো গো শিক্ষা মন্ত্রী মন দিয়ে, উদয়ন পণ্ডিত কে দেশের বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপাচার্য বানিয়ে এক বছরের চুক্তি তে বিলেত পাঠিয়ে দাও প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার জন্য। আর কিছু একটা করো যে উদয়ন যেনো দু বছর আসতে না পারে।
শিক্ষা মন্ত্রী: আইজ্ঞা মহারাজ।
রাজা: আর এই যে বৈজ্ঞানিক, তুমি তো কিছুই করলে না। এক কাজ করো, তোমাকে আমি নির্বাচন অধিকারী বানাচ্ছি। তুমিও একবার কদিন চিন আর রাশিয়া ঘুরে এসো, দেখে এসো ওখানে কেমন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়ে। দেখে এসো, তবে করবে তাই যা আমি বলবো।
বৈজ্ঞানিক: আজ্ঞা মহারাজ, তা কী করবো বলেন?
রাজা: ওই অর্থ মন্ত্রী আর শিক্ষা মন্ত্রী কে যা বললাম সেটা হবার পর তুমি সাধারণ নির্বাচন এর বিজ্ঞপ্তি বার করবে। তাতে থাকবে, যে কোনো মানুষ নির্বাচনে নিজের নাম দিতে পারবে, কম করে ৫০ জন সমর্থক এর সই চাই, টিপ সই চলবে না। কোনো সমর্থক একের বেশি প্রার্থী কে সমর্থন দিতে পারবে না। আর সব থেকে বড়ো কথা, প্রতি টা প্রার্থী কে নির্বাচন এর খরচ এর জন্য কম করে ২৫ ক্যারেট এর হীরা জমা দিতে হবে।
বৈজ্ঞানিক: হে হে মহারাজ, সব হীরা কিনে নেবার পর মানুষ এই ২৫ ক্যারেট হীরা পাবে কোথায়?
রাজা: আরে, সাধারণ মানুষের কাছে না থাক, আমাদের কাছে তো থাকবে, আমরা তো প্রার্থী হবো। আর শোন অর্থ মন্ত্রী, যদি কারো কাছে সেই সময় ২৫ ক্যারেট এর হীরা থাকে তাহলে তোমার ঐ আয় কর বিভাগের ওপর ওয়ালাদের সবার গর্দান যাবে খেয়াল রেখো।
যাক আজকের সভা শেষ। সবাই নিজের নিজের কাজ করে দিন পনেরোর ভেতর আমাকে জানাও।
মন্ত্রিগণ এক সুরে: জয় হীরক রাজার জয়।
অনুপ মুখার্জী "সাগর"
আজকের প্রেক্ষাপটে অপূর্ব
ReplyDelete